Abstract:
মধ্যযুগীয় ইউরোপের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসে স্পেন একটি গে․রবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করে।১ মুসলমানদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল সাহিত্যকর্মের ঐশ^র্যমÐিত কেন্দ্র ছিল মুসলিম স্পেন। একথা বলা যায় যে, আট শতক থেকে পনের শতক পর্যন্ত (৭১১ খ্রিস্টাব্দ-১৪৯২ খ্রিস্টাব্দ) আরবিভাষী লোকেরাই পৃথিবীব্যাপী সং¯‥ৃতি ও সভ্যতার মশালবাহী ছিল (ইবধৎবৎং ড়ভ ঃড়ৎপয ড়ভ পঁষঃঁৎব ধহফ পরারষরুধঃরড়হ)।২ তমসাচ্ছনড়ব ইউরোপে স্পেনই ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষাদীক্ষা, শিল্প-সাহিত্য ও সং¯‥ৃতির আলোকবর্তিকা। দীর্ঘ সাতশত বছর ধরে স্পেন মুসলিম শাসনাধীনে ছিল। বুদ্ধিবৃত্তিক বিজ্ঞান, সুকুমার শিল্প ও সাহিত্যের অগ্রগতিতে মুসলিম শাসকদের অবদান অপরিসীম। তাঁরা পর্যবেক্ষণের এমন সকল নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করেন যা ইউরোপের উনড়বততর ক্সবজ্ঞানিক অগ্রগতির পথ সুগম করেছিল। মধ্যযুগে স্পেনের মুসলিম মনীষীগণ বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল যে সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন তা পাশ্চাত্যকে জ্ঞান গরিমায় উদ্ভাসিত করে তুলেছিল। ইউরোপে পরবর্তীতে রেনেসাঁর সূত্রপাত করতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা ছিল।
মুসলিম স্পেন যখন জ্ঞান বিজ্ঞান, শিল্প-সভ্যতা ও সং¯‥ৃতি চর্চায় নিয়োজিত তখন ইউরোপ সীমাহীন অজ্ঞতা ও বর্বরতায় নিমগড়ব। ঔ.ড. উৎধঢ়বৎ বলেছেন, “ইউরোপীয়রা তখন বর্বর বন্য অবস্থা ছাড়িয়ে উঠেনি বলা চলে। তাদের দেহ অপরিচ্ছনড়ব, হৃদয় তিমিরাচ্ছনড়ব ছিল। হীন ধর্ম তত্ত¡ মর্যাদাশূন্য উচ্চাকাক্সক্ষী পাদ্রীরা ক্ষমতার জন্য বিবাদে মত্ত ছিল। অধিবাসীরা পর্ণ কুটিরে বাস করত। মেঝে নল খাগড়ায় ঢেকে দেওয়ালে খড়ের মাদুর টাঙ্গিয়ে রাখতে পারলেই ঐশ^র্যের চিহ্ন বলে বিবেচিত হত। সিম, কালাই, বৃক্ষমূল এমনকি ছাল খেয়ে অতি কষ্টে তারা জীবন ধারণ করত। অপরি®‥ৃত বা বড়জোর পরি®‥ৃত চামড়া দিয়ে তারা পোশাক ক্সতরি করত। এর উপর একখানা গো-যান থাকলেই রাজার আড়ম্বর পর্যাপ্ত পরিমাণে ও সন্তোষজনক রূপে প্রকাশ পেত। অন্তত দু’জোড়া গরুতে এই গাড়ি টানত। দ্রæতগামী ভ‚মিদাসেরা খড়ের আঁটিতে পা জড়িয়ে আঙ্গুল লাগিয়ে তাদের গতি বৃদ্ধি করত। সনড়ব্যাসী ও সনড়ব্যাসিনীদের মিথ্যা দেহাবশেষে অলে․কিক ক্ষমতা সম্বন্ধে সর্বপ্রকার কাল্পনিক গল্পে লোকদের প্রগাঢ় বিশ^াস ছিল।”৩
ইউরোপীয় ঐতিহাসিকগণের মতে, মধ্যযুগীয় ইউরোপের বর্বরতা, পশ্চাদপদতা, বুদ্ধিবৃত্তির স্থবিরতা এমনভাবে গ্রাস করেছিল যে, তা বর্ণনাতীত। মুসলিম স্পেনে ইসলাম প্রচার ও মুসলিম সভ্যতার বিকাশের প্রাক্কালে সমগ্র ইউরোপে শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান চর্চার যে করুণ অবস্থা ছিল তা উল্লেখ করে ২
জ‣নক ঐতিহাসিক বলেন, “তদানীন্তন অসভ্যতা ও মূর্খতার লীলাক্ষেত্র ইউরোপ তখন বিভিনড়ব মতাবলম্বীগণের মতবিরোধ নিয়েই পরস্পর মারামারি-কাটাকাটি করে মরছিল। সাহিত্যাদি ও গণিত শাস্ত্রের সমাদর তো দূরের কথা জ্ঞান-চর্চা মাত্র তৎকালে রাজদ্রোহিতামূলক ইন্দ্রজাল বলে পরিগণিত হত। এমনকি জ্ঞান অন্বেষণে রত লোকদেরকে গুরুতর অপরাধে অপরাধী বলে গণ্য করা হত। প্রাচীন গ্রিক রাজাগণ কর্তৃক সংস্থাপিত পাঠাগারগুলো ভস্মীভূত ও বিলুপ্ত হবার সাথে সাথে শিক্ষা ও জ্ঞানের নির্মল জ্যোতি ইউরোপ থেকে সম্পর্ণূভাবে তিরোহিত হয়েছিল।”
তৎকালীন সময়ে ইউরোপে জ্ঞানের প্রচন্ড দুর্ভিক্ষ চলছিল। “তৎকালে বহু শতক পর্যন্ত ইউরোপে অধ্যয়নের উপযুক্ত কোন গ্রন্থাদি রচিত হয়নি। শাসক শক্তির দুর্বিষহ নির্যাতন ও অত্যাচার হতভাগ্য শিক্ষিত সম্প্রদায়ের উপর প্রয়োগ করা হত। পৃথিবীর গোলত্তে কেউ আস্থা স্থাপন করলে তাকে ভীষণ অপরাধে অপরাধী বলে কঠিন শাস্তি দেওয়া হত। যে জ্ঞান পিপাসা মেটাতে গিয়ে আলেকজান্দ্রিয়ার ধর্মযাজকদের হাতে মহামতি হাইপেশিয়ার (ঐুঢ়ধঃরধ) পবিত্র দেহ শত সহস্র খÐে বিখÐিত হয়েছিল। অনুরূপ জ্ঞান পিপাসার অপরাধে অপরাধী গ্যালিলিওকেও রোমের ধর্ম যাজকদের আদেশে নিগৃহীত ও কারাবরণ করতে হয়েছিল। প্রচলিত মতবাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার অভিনব মতামত প্রকাশিত করলেই তার ধন, মান ও জীবন নিরাপদ থাকত না। ফলে ইউরোপে বহু শতক ব্যাপী প্রতিভাশালী আইনজ্ঞ, সূ²দর্শী দার্শনিক ও সুচারুসম্পনড়ব কবির আবির্ভাব হয়নি।”
প্রাচীন আরবের তমসাচ্ছনড়ব যুগের মত মধ্যযুগীয় ইউরোপে যে অন্ধকারাচ্ছনড়ব যুগ বিরাজ করত তার চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। জ‣নক খ্রিস্টান ঐতিহাসিক নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেছেন, “স্বনামধন্য পোপ গ্রেগরী দি গ্রেট রোমক রাজ্য থেকে যাবতীয় পÐিতদেরকে নির্বাসিত করেছিলেন। মহামতি অগাস্টাস সীজারের চেষ্টার ফলে যে দার্শনিক পুস্তকাগার স্থাপিত হয়েছিল তিনি সেই সুবিশাল লাইব্রেরীর দাহμিয়া মহাসমারোহে সুসম্পনড়ব করে ‘মূর্খতাই ধর্ম নিষ্টার প্রসূতি’- এরূপ প্রবাদ তৎকালে প্রচলিত করেন। তার কুশাসনে সমগ্র রাজ্য প্রাচীন গ্রিক ও রোমকে গ্রন্থাদি পাঠ সর্বতোভাবে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তৎকালীন ধর্মান্ধ খ্রিস্টানগণ দর্শন, বিজ্ঞান ও সাহিত্যাদি ললিত শাস্ত্রের উপর তীব্র অভিসম্পাত করে পুণ্য সঞ্চয়ের প্রচেষ্টা করতেন।”৬ প্রখ্যাত দার্শনিক ও ঐতিহাসিক লেকি বলেন, “স্বাধীন চিন্তার অগ্রদূত মুসলিমগণই আট শতকে ইউরোপীয় শিক্ষার রুদ্ধ-দ্বার উন্মোচন করেন এবং তথায় μমে μমে উচ্চ শিক্ষার পথও সুগম করেন। প্রকৃত পক্ষে মুসলিমদের স্পেন অধিকারের পূর্বে জ্ঞান বিজ্ঞান নির্জীব অবস্থায় ও শঙ্কিতভাবে সমগ্র ইউরোপ থেকে বিদায় নিয়েছিল। ধর্ম যাজকদের মধ্যে সামান্য যেটুকু জ্ঞান চর্চার প্রচলন ছিল তাও ৩
আবার কেবলমাত্র কুসং¯‥ার বৃদ্ধির মানসে ব্যবহৃত হত। এভাবে মধ্যযুগে জ্ঞান চর্চার প্রথা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হলে অজ্ঞানতার গহীন অন্ধকারে সকল ইউরোপ আচ্ছনড়ব হয়ে পড়ে।”৭
Description:
This Thesis is Submitted to the Department of Islamic History and Culture, University of Rajshahi, Rajshahi, Bangladesh for The Degree of Master of Philosophy (MPhil)